
ঢাকা: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনের ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারে সরাসারি সম্প্রচার করা হেয়।
ভাষণে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দূর করার আহ্বান জানান।
তফসিল ঘোষণার আগে বিকাল ৫টায় সিইসির সভাপতিত্বে কমিশনের ২৬তম বৈঠক হয়। সেখানে তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচি জানান সিইসি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচিই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাতিল হলে এর বিরুদ্ধে আপিল ও আপিল নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর। প্রচারণার জন্য ২২ দিন সময় রয়েছে।
নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা অনুসারেই তফসিল ঘোষণা করছে নির্বাচন পরিচালনাকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটার তালিকা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে ইসি। এবার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার ৮৫২। এর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিলো ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন।
সারা দেশে ভোটকেন্দ্রের খসড়াও প্রস্তুত করা আছে। খসড়া অনুযায়ী এবার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ১০৩টি। এতে ভোটকক্ষ রয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজারের মতো। প্রায় ৫ শতাংশের মতো ভোটকেন্দ্র এবার বাড়ছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। আর ভোট কক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১৯টি। বিধান অনুযায়ী তফসিলের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করবেন। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মার্কিং সিলসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সিল ছোট-বড় চটের বস্তা ও নির্বাচনের অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের বেশির ভাগ ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুবিধাযুক্ত এবং প্রার্থী, ভোটারদের জন্য নানা ধরনের সুবিধাযুক্ত দুটি অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর কখন কোন কাজটি করা হবে, তাও চূড়ান্ত করা আছে। ভোটার তালিকার সিডি, মনোনয়ন ফরম ও নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল (নির্দেশিকা) ছাপানোর সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে- ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ সালের ৭ মে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর।