
নব আলো : পুঁজিবাজারে সূচকের টানা পতন চলছে । প্রতিদিন শেয়ারের দর কমতে থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সপ্তাহের প্রথম দিন রোববারও অব্যাহত ছিল সূচকের পতন। দিনশেষে ৫৮ পয়েন্ট সূচক পড়ছে। আর এটাকে বিনিয়োগকারীরা মোটেই স্বাভাবিক মনে করছেন না।
টানা পতনে দিশেহারা তারা। পোর্টফোলিও থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৮ শতাংশ টাকা কমে যাচ্ছে। আরও বেশি পতনের ভয়ে আছেন অনেকে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এভাবে প্রতিদিন শেয়ারপ্রতি দর কমতে থাকলে সপ্তাহ শেষে মোটের ওপর বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হয়। যদিও গত বছর থেকে সৃষ্ট পতনে লোকসানের বৃত্তেই আমাদের অবস্থান। এরপর সূচকে এমন টানা পতন হলে ধৈর্য থাকবে না। ফোর্সসেল দিয়ে অনেকেই বের হয়ে যাবেন। বড় ধরনের পতনের মুখে পড়বে বাজার।
এ অবস্থায় বাজার-সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা নেওয়া জরুরি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোনো ভূমিকাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন, যার ফলে বাজার দ্রুত গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। আর লেনদেন ক্রমান্বয়ে যাচ্ছে শূন্যের কোটার দিকে। দেশের অর্থনীতির একটি বড় খাত পুঁজিবাজারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ভেবেচিন্তে দ্রুত এবং সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে ২০১০ সালের মতো আবারও বাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থাহীনতা তৈরি হবে বলেও মনে করছেন তারা।
কেউ কেউ বলছেন, দেশে একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যাদের হাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থ রয়েছে। কিন্তু এ অর্থ বিনিয়োগের কাজে ব্যয় হয় না। অন্যদিকে অনেক উদ্যোক্তা অর্থের অভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। পুঁজিবাজার এ দুই শ্রেণীর মানুষের সংযোগ ঘটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।
পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হলে এ অর্থই বড় অংকের মূলধনে পরিণত হতে পারে। এ বাজারের গভীরতা বাড়াতে আরো বেশিসংখ্যক বহুজাতিক ও স্থানীয় বৃহৎ কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। আর এজন্য দরকার সরকারের পক্ষ থেকে নীতিসহায়তা। সরকার পুঁজিবাজার সহায়ক নীতি প্রণয়ন করলে এ বাজার আরো বেশি কার্যকর হবে।
আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই সেল প্রেসারে টানা নামতে থাকে সূচক। রোববার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫৫১২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১২৮১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৯৭২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৪টির, কমেছে ২০৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৩টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩৫৪ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা।
এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫৫৭০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১২৮৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৯৯২ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৩৯০ কোটি ৯৯ লাখ ২ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৩৬ কোটি ৬৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএসইএক্স ১৩৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১০ হাজার ২৩৫ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৪৬টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ১৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৫টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৮৯ টাকা। তথ্যসূত্র: পূঁজিবাজার ডটকম।