ব্রেকিং নিউজঃ |
রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুতে এবার শোক প্রকাশ করলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারেরও দাবি করেন তারা।
পাশাপাশি পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে নামা, কন্ট্রাক্টে গাড়ি চলাচল বন্ধসহ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন তারা।
বুধবার রাজধানীর কাজী বশির মিলনায়তনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের এক সভায় পরিবহন নেতারা এসব বক্তব্য দেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার পরিবহন খাতে অস্থিরতা নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার রাজধানীর কুড়িলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি উঠে আসে পরিবহন নেতাদের বক্তব্যে। সভায় ধর্মকে সাক্ষী রেখে কন্ট্রাক্টে গাড়ি না চালানোর বিষয়ে মালিক ও শ্রমিকদের শপথ পড়ানো হয়।
এছাড়া ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহকে আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরুকে সদস্য সচিব করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। সভায় পরিবহন খাতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টিও উঠে আসে।
ওই সভার সভাপতি খন্দকার এনায়েত বলেন, একজন বাবা সন্তানকে নিয়ে জেব্রা ক্রসিং পার হচ্ছিলেন। তাদের দেখে একটি গাড়ি থেমে গেল। আরেকটি গাড়ি ব্রেক না করে বাবার সামনে ছেলেকে নিয়ে গেল। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ মর্মান্তিক ও কষ্টকর। এর জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়রের নির্দেশের পর সুপ্রভাত কোম্পানির গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছি। তবে যে গাড়িটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ওই গাড়ির রুট পারমিট ও ফিটনেস ছিল। হালকা যানের লাইসেন্সধারী ওই বাসটি চালাচ্ছিল।
তিনি চালকদের ভারি লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানিয়ে বলেন, ১ বছর গাড়ি চালানোর পর পরীক্ষায় পাস করলে তাকে ভারি চালকের লাইসেন্স দিতে হবে। তিনি চালকদের নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, যখন একটা ভবিষ্যৎ হারিয়ে যায় তখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আমার সন্তান যদি এভাবে দুর্ঘটনায় হারিয়ে যায় তাহলে কী হতো- সেই পরিণতি সব মালিক-শ্রমিককে ভাবতে হবে। দু’দিন পরপর সড়কে দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু হচ্ছে, এ নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে- এর দায়দায়িত্ব আমাদেরও আছে। এর থেকে কোন প্রক্রিয়ায় বের হব তা বের করতে হবে।
পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, কিছু অসাধু পুলিশ কাগজ চেক করার জন্য নয়, টাকার জন্য গাড়ি থামায়। সাধারণ মালিকদের গাড়ির সব কাগজপত্র থাকার পরও তারা হয়রানি করে। আবার অনেক মালিকের গাড়ি ধরে না। তাদের কাগজপত্র না থাকার পরও গাড়ি চলতে দেয়। এসব আমরা পাহারা দেব। সাধারণ শ্রমিকদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সপ্তাহে ২-৪ দিন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের রাস্তায় নামার অনুরোধ জানান তিনি।
সভায় আজমেরী পরিবহনের চেয়ারম্যান ইসমাঈল হক দুর্ঘটনায় আবরার আহামেদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ চালকের মাদক সেবন।
চালকদের প্রতি আমার অনুরোধ, মাদক সেবন করে গাড়ি চালাবেন না। মালিকদের অনুরোধ করব, চালকদের নির্দিষ্ট সময় বিশ্রাম দেবেন। লাইসেন্স ছাড়া কারও হাতে গাড়ি তুলে দেবেন না। এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন বাবু বলেন, শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় দায় যারই হোক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়ীর বিরুদ্ধে যে সাজা হওয়ার দরকার সেই সাজা দেয়ার দাবি জানাই।
সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বাসের রেষারেষি উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালকদের কন্ট্রাক্টে গাড়ি দেয়ার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। আমরা আগেই কন্ট্রাক্টে গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য বলেছি। এখনও যারা এ প্রক্রিয়ায় গাড়ি চালান তাদের গাড়ি জব্দের অনুরোধ জানাই।
এ সময় তিনি পরিবহন খাতে অস্থিরতার জন্য কয়েকজন মালিক ও শ্রমিক নেতাকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। এছাড়া অন্য নেতাদের বক্তব্যে পরিবহন খাতের অস্থিরতা নিয়ে কথা উঠে আসে।
প্রভাতী নিউজ / জি এস
সংবাদটি পঠিতঃ ২১৩ বার