ব্রেকিং নিউজঃ |
জাতীয় পার্টিতে ‘রওশন নাটক’-এমন শিরোনাম করেছে সংবাদ পত্রিকা। এই খবরটিতে বলা হয়েছে, রওশন এরশাদ নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত নিজের স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে জাপার রাজনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে এ নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা।ওই বিজ্ঞপ্তি আসলেই রওশন এরশাদের পাঠানো কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে এ খবর ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এ সম্পর্কিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি রওশন এরশাদ যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটিকে ‘ভুয়া’ দাবি করেন তিনি। একই বিষয়ে জাপার আরো দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যও আলাদা বিবৃতি ও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।
দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার শিরোনাম, ‘Tale of 2 fake press releases.’ এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব্ আবারো সামনে আসছে।
গতকাল দুটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে পাঠানো দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বেশ কিছু সময় ধরে ভাইরাল হয়। এরমধ্যে রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদের পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন।
তার পাঠানো আরেকটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের অনেক নেতা জিএম কাদেরে নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। পরে দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিই ভুয়া বলে প্রমাণিত হয় এবং রওশন এরশাদের ঘনিষ্ট একজন দ্য ডেইলি স্টারকে জানায় যে, এ বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না তিনি।
আচমকাই জাতীয় পার্টিতে (জাপা) শোরগোল। জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে, দলটির পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। এতে দলটির ৪ জন কো চেয়ারম্যান ও ২ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যেরও সায় আছে, এমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
রওশন এরশাদ দলটির নতুন চেয়ারম্যান এমন খবরে বনানীতে জিএম কাদেরের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন জাপার অনেক নেতাকর্মীও।
এমন এক সময় এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো, যখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের তিন দিনের সফরে ভারতে অবস্থান করছেন। আর গত ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
যদিও জাপার এ ধরনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নতুন নয়। দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ দলটির চেয়ারম্যান থাকার সময়ও একাধিকবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন তার স্ত্রী ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। এরশাদের মৃত্যুর পর দেবর ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান রওশন।
বলা চলে, শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্বের জেরে দলটিতে দুটি ধারা এখন স্পষ্ট। জিএম কাদেরপন্থিদের দাবি, বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কৃতরা রওশনপন্থিদের নেতৃত্বে আছেন। তারা গঠনতন্ত্র বহির্ভূত কাজ করায় দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
২২ আগস্ট বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে প্রেস নোট (জাপা) নামক হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে লাঙল মাল্টিমিডিয়ার পক্ষে কাজী লুৎফুল কবীর জানান, দলের পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এতে জাপার ৬ জন শীর্ষ নেতার সম্মতি রয়েছে মর্মে তাদের স্বাক্ষর সম্বলিত সভার কার্যবিবরণীও দেওয়া হয়।
যদিও দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তথ্যটি সঠিক নয়। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে এভাবে চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই।
গত বছর ৭ ডিসেম্বর সভার এক কার্যবিবরণীতে বলা হয়, মামলা-মোকদ্দমায় জাতীয় পার্টির চলমান অচল অবস্থা নিরসনে ৪ জন কো-চেয়ারম্যান ও ২ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে সংকট উত্তরণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এতে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্টির চার কো-চেয়ারম্যান ও ২ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রধান পৃষ্ঠপোষককে ক্রান্তিকাল মোকাবিলায় অস্থায়ী ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পণ করেন। কো-চেয়ারম্যানরা হলেন, এ.বি.এম রুহুল আমিন হাওলাদার ,অ্যাডভোকেট. কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাড. সালমা ইসলাম। আর প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ডা. নাছরিন জাহান রত্নী। যা মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রওশন এরশাদ গ্রহণ করেছেন বলে দেখা যায়।
তবে এটি অস্বীকার করেছেন রওশনপন্থিরা। রওশন এরশাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমি বেগম রওশন এরশাদ, এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। এতে ৩ জায়গায় পার্টির স্থলে লেখা হয়েছে ‘পাটি’। আর চেয়ারম্যানের স্থলে লেখা হয়েছে ‘চেয়াম্যান’। এছাড়া রওশনকে চেয়ারম্যান করতে সম্মতিক্রমে ৬ নেতার স্বাক্ষর সম্বলিত যে কার্যবিবরণী আছে তাতে তারিখ দেওয়া আছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর। যা রওশন এরশাদ ২২ আগস্ট গ্রহণ করছেন মর্মে স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ জাগো নিউজকে বলেন, যারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তারা বিস্তারিত বলতে পারবে।
রওশনপন্থি নেতা ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, বিষয়টি আমি এখনো ক্লিয়ার না। আপনাকে পরে জানাতে পারবো।
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবার জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, রওশন এরশাদ এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কিছুই জানেন না। নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণার প্রশ্নই আসে না। আমাদেরই কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এটি ছড়িয়েছেন। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, যে কেউ ইচ্ছা করলেই নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করতে পারেন না। একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে হয়।
অন্যদিকে, রওশনকে জাপার নতুন চেয়ারম্যান ঘোষণার ‘ভুয়া’ বিজ্ঞপ্তির প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এটি সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এ খবর ভুয়া। আমাদের দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে কারো চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ নেই। জাতীয় পার্টি গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। আমার মনে হয় কিছু ব্যক্তি যারা দল থেকে বহিষ্কৃত তারা ম্যাডামের (রওশন) নামটা ব্যবহার করে ফেইক নিউজ দিয়েছে।
মজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, যাদের স্বাক্ষর করার কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্তের সহযোগিতা করেন নাই। কোনো স্বাক্ষর দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি এটি শুনে ‘হাস্যকর’ বলেছেন।
সংবাদটি পঠিতঃ ৫৮ বার